ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

Spread the love

টেন্ডারবাজি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে ‘ছাত্রলীগ’ নামধারীরা

শরিফুল হাসান


সহপাঠীর শ্লীলতাহানি ও শিক্ষিকাকে অপদস্থ করার মতো গুরুতর অপরাধে কিছুদিন আগে বহিষ্কার করা হয় ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তিন ছাত্রকে। তিনজনই পরিচিত ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে। এই ইনস্টিটিউটের ছাত্রলীগের একাংশ টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও মেয়েদের উত্ত্যক্ত করাসহ ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক আরও অনেক অপকর্মে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেয়ে ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজির ছাত্র অমিত কুমার দে ও সিভিল টেকনোলজির ছাত্র বি এম মোবারক হোসাইনকে এবং শিক্ষিকাকে অপদস্থ করায় যন্ত্র প্রকৌশলের ছাত্র মাহবুবুল আলমকে গত ২৭ এপ্রিল বহিষ্কার করা হয়।ইনস্টিটিউটের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগের নামধারী ২৫ থেকে ৩০ জন ছাত্র চাঁদাবাজি, ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা এবং কলেজের কিছু শিক্ষক তাঁদের সমর্থন দিয়ে আসছেন। এভাবে রাজনৈতিক নেতারা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন, আর শিক্ষকেরা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে দল ভারী করেন।ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি সত্যি, কিছু ছাত্র অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এর মধ্যে এক ছাত্রীর সঙ্গে যেটি করা হয়েছে, সেটি কখনোই এই ইনস্টিটিউটে হয়নি।’তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা সূত্রে জানা গেছে, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট যাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, তারাই ওই এলাকার টেন্ডার ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে। গত দুই দশকে ইনস্টিটিউটে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তিনজন ছাত্রনেতাসহ আটজন নিহত হয়েছেন। গতবছর র্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত দুই ছাত্র মহসিন শেখ ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর পেছনেও রাজনীতি জড়িত ছিল বলে অভিযোগ আছে।ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের একাংশের নেতা জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই দুজনই আমার কর্মী ছিল। কিন্তু ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ এই হত্যাকাণ্ডে ইন্ধন জুগিয়েছে।’গত বছরের মার্চে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসে সংগঠনটির কার্যক্রম স্থগিত করে ১৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়। শিক্ষিকা অপদস্থকারী মাহবুবুল আলম তাঁদের অন্যতম। অন্যরা হলেন রাসেল মাহমুদ, কমলেশ মুখার্জী, চিকা রাসেল, ইকবাল হোসেন, মনিম, শ্রাবণ, আবুল হোসেন, সারোয়ার সুমন, সাকিব, মাহাদী, জয় ও মেহেদী হাসান। ছাত্রদের অভিযোগ, বহিষ্কারের পরপরই এই ১৬ জন মিলে একজোট হয়ে ছাত্রলীগ পরিচয়েই বিভিন্ন অপরাধ চালাতে থাকেন। তবে বহিষ্কৃত পক্ষের অভিযোগ, সব অপকর্ম করছেন প্রতিপক্ষের নেতা জাকির হোসেন।এলাকার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার তালুকদার সারোয়ার বহিষ্কৃত ১৬ জনের গ্রুপটিকে সমর্থন দেন বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষক ও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাঁরা বলেছেন, উল্লিখিত তিন ছাত্রকে বহিষ্কারের এক সপ্তাহ পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে গিয়ে তাঁদের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেন সারোয়ার।এ প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘যিনি এসেছিলেন, তিনি এখানকার ছাত্র ছিলেন। তিনি একজনের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ করেছেন।’তালুকদার সারোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রতি মাহবুবুল আলম নামের একজন ছাত্রের ব্যাপারে আমি অধ্যক্ষের কাছে গিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছে, ছেলেটি বড় অন্যায় করেনি।’তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার অপারেশন কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে পলিটেকনিকে। এখানে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি না থাকায় একক কোনো নেতৃত্ব নেই।পুলিশের অভিযোগ, শিল্পাঞ্চল এলাকার টেন্ডারবাজি ও ছিনতাইয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পলিটেকনিকের ছাত্রনেতারা জড়িত থাকেন। সম্প্রতি সাড়ে তিন লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ পলিটেকনিকের ছাত্র কমলেশ মুখার্জীকে (বহিষ্কৃত) গ্রেপ্তার করে।ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘কেউ বাইরে থেকে এসে ক্যাম্পাসে ছিনতাই-চাঁদাবাজি করছে, সেটি আমিও বিশ্বাস করি না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.