শরিফুল হাসান

রাজপ্রাসাদের মতো দেখতে অসাধারণ স্থাপত্যের একটি দোতলা ভবন। সামনের বাগানে দুটি শিশু। ঢাকার ৪০০ বছরের আলোকচিত্র নিয়ে ফেসবুকে সক্রিয় একটি পাতায় ১৯৩০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য (১৯২৬-১৯৩৪) অধ্যাপক জর্জ হ্যারি ল্যাংলির সময়ের এই ছবি পাওয়া গেল। ছবির সূত্র ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য (১৯২০-১৯২৫) স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগের আরেকটি ছবির খোঁজ দিলেন। সেই ছবিতে জোসেফ হার্টগ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা আছেন। ইতিহাস বলছে, ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় লর্ড কার্জন পূর্ববঙ্গ ও আসাম নিয়ে একটি আলাদা প্রদেশ গঠনের প্রস্তাব করেন। নতুন এই প্রদেশের রাজধানী ঠিক করা হয় ঢাকায়। ইতিহাসবিদ আয়শা বেগম রচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: স্মৃতি নিদর্শন গ্রন্থে বলা হয়েছে, পূর্ববঙ্গের প্রথম লেফটেন্যান্ট গভর্নর জোসেফ ব্যামফিল্ড ফুলারের বাসভবন হিসেবে উপাচার্যের এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়। অবশ্য কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে, বাসভবনটি করা হয়েছিল পূর্ববঙ্গ ও আসামের মুখ্য সচিবের (চিফ সেক্রেটারি) জন্য। লর্ড কার্জন ১৯০৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি যখন কার্জন হলের উদ্বোধন করেন, তখন এই ভবনটিও নির্মিত হয়েছে। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে পূর্ববঙ্গের মানুষের অসন্তোষের বিষয়টি উপলব্ধি করে তাদের সান্ত্বনা দিতে ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকায় আসেন। ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকার বিশিষ্ট নাগরিকেরা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করেন। হার্ডিঞ্জ ব্রিটিশ সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর অঙ্গীকার করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে বাড়িটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক জানান, ১৯২০ সালের ১ ডিসেম্বর জোসেফ হার্টগকে প্রথম উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। সেই থেকে ২৭ জন উপাচার্যের সবাই এই বাড়িতে থেকেছেন। বর্তমানে এটি উপাচার্য বাসভবন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর বাংলো হিসেবে পরিচিত।