শরিফুল হাসান
কানাডার সাসকাচুয়ানে এক ইংরেজি বানান প্রতিযোগিতায় ছয় হাজার প্রতিযোগীর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশি কিশোরী সিহাম আবদুল্লাহ।কানাডার বিভিন্ন অঞ্চলের বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রের স্বত্বাধিকারী পোস্ট মিডিয়া নেটওয়ার্ক ১১ বছর ধরে ‘স্পেলিং বি’ নামে এই বানান প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। গত বছর সিহাম চূড়ান্ত পর্বে এতে রানারআপ হয়েছিল।সাসকাচুয়ান থেকে বের হওয়া পোস্ট মিডিয়া গ্রুপের জনপ্রিয় দৈনিক লিডার পোস্ট-এর ৬ মার্চের মূল শিরোনাম ছিল সিহামকে নিয়ে।এবার এ প্রতিযোগিতার আঞ্চলিক পর্বে অংশ নিয়েছিল ছয় হাজার শিক্ষার্থী। ভুল করলেই প্রতিযোগিতার একেকটি রাউন্ড থেকে বাদ পড়তে হতো। চূড়ান্ত পর্ব পর্যন্ত টিকে ছিল ৩৯ জন। এদের মধ্যে ৩৭ জন বাদ পড়ে রয়ে যায় সিহামসহ দুজন। তাদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে। প্রতিযোগিতার অষ্টম রাউন্ডে গিয়ে শেষ পর্যন্ত টিকে ছিল করোনেশন পার্ক স্কুলের লেভেল এইটের ছাত্রী সিহাম আবদুল্লাহ (১৩) ও একোল সেন্ট মাইকেলের ছাত্র জন অডুনটান (১২)। আয়োজকেরা ভেবেছিলেন, শিগগিরই এ দুজনের মধ্য থেকে একজন পরবর্তী রাউন্ডে চ্যাম্পিয়ন ও একজন রানারআপ হবে। কিন্তু তারা বুঝে উঠতে পারেননি প্রতিযোগিতা সবে শুরু! সিহাম ও অডুনটানের দ্বৈরথ চলতেই থাকে। একেক রাউন্ডে তারা হয় দুজনেই সঠিক বানান বলে, কিংবা উভয়েই ভুল করে। ক্রমে আয়োজকেরা কঠিন সব শব্দ বলতে থাকেন। এভাবেই বেশ কয়েক ঘণ্টা চলে যায়। অষ্টম রাউন্ড গড়ায় ২৬ রাউন্ড পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের মেয়ে সিহামের কাছে হেরে যায় অডুনটান। চ্যাম্পিয়ন হয় সিহাম। যে বানানটি সঠিকভাবে বলতে পেরে সিহাম জিতেছে তা হচ্ছে: আর্কিপেলাগো (Archipelago অর্থ: দ্বীপপুঞ্জ)।সিহাম ২৭ মার্চ জাতীয় পর্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। অনুষ্ঠান শেষে লিডার পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিহাম বলে, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। কেউ না কেউ হয়তো জিততই। আমি কেবল শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় থেকে ভালোভাবে বানান করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। শেষের দিকে এসে এমন অনেক কঠিন ও জটিল শব্দ শুনছিলাম, যেগুলোর অর্থও আমি জানি না। কিন্তু আমি শুদ্ধ বানান বলতে পেরেছিলাম।’এবারের প্রতিযোগিতার আয়োজক বিল রাইট বলেন, সপ্তমবারের মতো এই (আঞ্চলিক পর্ব) অনুষ্ঠান হচ্ছে। কিন্তু কখনোই এই প্রতিযোগিতা এত দীর্ঘ হয়নি। কখনো এত তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। সিহাম চ্যাম্পিয়ন হিসেবে একটি ট্রফি, পাঁচ হাজার ডলার আর ফ্যামিলি প্যাকেজ ট্যুর পুরস্কার পেয়েছে। এ ছাড়াও জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এ মাসের শেষেই সে টরন্টো যাবে। কেবল ইংরেজি বানানই নয়, আরও অনেক গুণের অধিকারী সিহাম। ভালো পিয়ানো বাজায় সে। ‘হার্ট অব দ্য সিটি’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার পর কানাডার বিভিন্ন শহরে পিয়ানো বাজানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। বিজ্ঞান, গণিতসহ প্রতিটি বিষয়ে ‘এ প্লাস’ পাওয়ায় স্কুল থেকে বিশেষ সনদ পেয়েছে সে। সিহামের বাবা এস এম আবদুল্লাহ, মা হাসিনা মনোয়ারা। দুজনেই চাকরি করেন। এস এম আবদুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ১৯৯১ সালে তিনি অভিবাসন নিয়ে কানাডা যান। আবদুল্লাহ টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার ছেলেমেয়েদের সব সময় বাংলাদেশের কথা বলি। বলি ওটাই আমাদের শিকড়। মেয়েকে নিয়ে আমি এ পর্যন্ত চারবার দেশে এসেছি।’আবদুল্লাহ জানান, সিহাম ২৭ মার্চ ‘স্পেলিং বি’র জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। তাতে কানাডার ২১টি অঞ্চল থেকে সেরা ২১ জন প্রতিযোগী অংশ নেবে। সিহাম টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেছে, ‘এখন আমি বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা দেখি। আমি বাংলাদেশ দলের ভক্ত। বাংলাদেশকে খুব ভালোবাসি। আমি সব সময় বাংলাদেশকে মনে রাখব।’