কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে গৃহযুদ্ধ থামাতে শান্তি মিশন

Spread the love

ফেরার অপেক্ষায় বিমানবন্দরে ১২৪ পুলিশ সদস্য

শরিফুল হাসান

গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের রাজধানী কিনসাসা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কয়েক দিন ধরে ‘মানবেতর জীবনযাপন’ করছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ১২৪ জন সদস্য। তাঁরা সবাই বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্য হিসেবে জাতিসংঘের মিশনে গিয়েছিলেন। ১৪ দিন ধরে তাঁরা বিমানের জন্য অপেক্ষা করছেন।পুলিশ সদস্যরা টেলিফোনে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, পাকিস্তান এয়ারলাইনসের একটি বিমানে করে তাঁদের আফ্রিকার দেশ কঙ্গো থেকে ঢাকায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তীব্র যুদ্ধ-পরিস্থিতির কারণে তাঁরা যথাসময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারেননি। বিমানটি তাঁদের না নিয়েই ফিরে আসে। এরপর বিমানটির আবার সে দেশে যাওয়ার কথা থাকলেও যায়নি। মকবুল হোসেন নামে পুলিশের একজন সদস্য মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, ‘তাঁরা ১৪ দিন ধরে বিমানের জন্য অপেক্ষা করছেন। প্রতিদিনই বিমান আসবে বলে শোনা যায়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিমান আসে না। ফলে এখন অর্ধাহারে-অনাহারে তাঁদের বিমানবন্দরে দিন কাটাতে হচ্ছে। কারণ, বিমানবন্দরে কোনো খাবার নেই। এখানকার পরিস্থিতি বেশ খারাপ।’ পুলিশ সদস্যরা জানান, তাঁদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা কমান্ডার হিসেবে আছেন পুলিশের সিনিয়র এএসপি আবু সুফিয়ান। সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে আবু সুফিয়ান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মিশন শেষ হয়েছে ২৩ নভেম্বর। পাকিস্তান এয়ারলাইনসের একটি বিমানে করে আমাদের ২৬ নভেম্বর ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা বিমানবন্দর পর্যন্ত যেতে পারিনি। পরবর্তী সময়ে ৩০ নভেম্বর আমাদের ফ্লাইট ঠিক হয়। কিন্তু সেদিনও বিমান আসেনি। ৬ ডিসেম্বর আবার তারিখ ঠিক হয়। সেদিনও বিমান আসেনি। আমরা অপেক্ষা করেই আছি। জানতে পারলাম, পাকিস্তান এয়ারলাইনসের বিমানটি নাকি সৌদি আরব থেকে অনুমতি পাচ্ছে না। তাই আসতে পারছে না।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গৃহযুদ্ধ চলা এই দেশটির বিমানবন্দরে আমরা চেয়ে-নিয়ে খেয়ে বেঁচে আছি। আমরা যদি পুলিশ না হয়ে কোনো বাহিনীর সদস্য হতাম, তাহলে এত কষ্টে থাকতে হতো না। পরিস্থিতি খুব খারাপ। একটু উদ্যোগ নিলেই আমরা ফিরতে পারব।’এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা আছে। পুলিশের জাতিসংঘ ডেস্কের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন।’ পুলিশের জাতিসংঘ ডেস্কের পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মুশফিকুর রহমান বলেন, প্রথম দিন রাস্তা বন্ধ থাকায় তাঁরা বিমানে উঠতে পারেননি। বিমানটি খালি চলে আসে। এখন সেখানে বিমান যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র পাচ্ছে না। ফলে পুলিশ সদস্যরা আসতে পারছেন না।কত দিন ধরে তাঁরা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন, জানতে চাইলে মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘প্রথম দিন বিমান মিস করার পর তাঁরা ক্যাম্পে ফিরে যান। মূলত তাঁরা বিমানবন্দরে আছেন ৬ ডিসেম্বর থেকে। তবে দেশে ফেরার জন্য তাঁদের ১০-১৫ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে, এটি সত্যি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। দু-এক দিনের মধ্যেই আশা করি তাঁরা দেশে ফিরতে পারবেন।’ পুলিশ সদস্যদের খাওয়াদাওয়া নিয়ে সমস্যা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এ ছাড়া নিরাপত্তা নিয়েও তাঁদের সমস্যা হবে না। কারণ বিমানবন্দরেও সেনাবাহিনী আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.