6/8/20
মাহবুব কবির মিলন স্যারকে ওএসডি করার কথা শুনে ভীষণ মর্মাহত হয়েছি। Mahbub Kabir Milon স্যার শুধু সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব নয়, সাধারণ মানুষের নানা সমস্যা সমাধানে তিনি যেভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছেন সেটার প্রশংসা করতেই হবে। সরকারি চাকুরি করে নিজ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি একটা মানুষ সারাক্ষণ দেশের কথা ভাবছেন, নানা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন, এগুলো অবশ্যই ভালো দিক।
দেখেন, একটা মানুষ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষে যোগ দিয়ে রীতিমত যুদ্ধ শুরু করলেন। এরপর তাকে সরিয়ে রেলে দেওযা হলো। মাত্র কয়েকমাস আগে রেলে যোগ দিয়েও থেমে থাকলেন না মাহবুব স্যার। রেলের টিকেট চোরাকারবারীদের ভাত মেরে তিনি নাম, ভোটার আইডি নাম্বার সম্বলিত অনলাইন টিকেটের প্রচলন করার কাজ করেছেন।
আমরা দেখেছি মাহবুব স্যার দেশের মানুষের জন্য তিনি দপ্তর থেকে দপ্তরে ছুটে বেড়িয়েছেন। এমনও হয়েছে তিনি কাজ করেন এক দপ্তরে, কিন্তু ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো নানা বিষয়ে কাজ করেছেন। এমনও হয়েছে অন্য দপ্তরের মন্ত্রীর মিটিংয়ে যাওয়ার জন্যে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছেন। একজন ক্যাডার কর্মকর্তা হয়েও কনফারেন্স রুমে চেয়ার পাননি, দাঁড়িয়ে থেকেছেন! তবুও গিয়েছেন শুধুমাত্র অনিয়মের চিত্র মন্ত্রীর সামনে তুলে ধরার জন্যে! এগুলোর প্রশংসা তো করতেই হবে।
এই তো বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে বেশ কয়েকদিন আগে তিনি একটা স্বপ্নের কথা বললেন। ১০ জন অফিসার নিয়ে তিন মাসে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুমতি চাইলেন। এই চাওয়াই কী তবে কাল হলো!
আমি ভীষণ মর্মাহত। শুধু মিলন স্যারের জন্য নয়, সব সৎ সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আমার এই কষ্ট। হ্যা, এই দেশে নানা বিষয় নিয়ে আমি লিখি। উদ্দেশ্য একটাই এই দেশ আর দেশের মানুষেরা ভালো থাকুক। সৎ মানুষগুলো তাদের লড়াই অব্যাহত রাখুক।
আমার কাছে মনে হয় সৎ মানুষগুলো একা। তাই এদেশে যখন কোন সরকারি কর্মকর্তা সততার সাথে লড়াই করেছেন, দেশ ঠিক করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, আমি তাদের ভক্ত হয়েছি। নিজে থেকে যোগাযোগ করি, তাদের লড়াইয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।
পাশে থাকতে চেয়েছি কারণ, আমার মনে হয়েছে, এই দেশের রাজনীতি বা আমলাতন্ত্র অসাধারণ সৎ কর্মকর্তা চায় না, তারা চায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা কেরানি যে শুধু চেয়ারে তোয়ালে দিয়ে বসে থাকবে, বিশাল হাবভাব নেবে, ঘুষ খাবে নয়তো সারাজীবন নির্বিবাদে স্বপ্নহীন একটা চাকুরি করে অবসরে যাবে। এমন কর্মকর্তা দিয়ে দেশ বদলানো যাবে না। বরং দেশ বদলাবে স্বপ্ন দেখা কিছু লড়াকু সৎ মানুষ দিয়ে।
আমি দেখেছি সরকারি চাকুরির মধ্যে থেকেও অনেক সৎ কর্মকর্তা এই দেশটাকে ভালোবেসে নানা উদ্যোগ নেন। কিন্তু সবসময় দেখেছি, সাধারণ মানুষ তাদের ভালোবাসলেও তাদের পেশার অন্যরা সবসময় বসে থাকে কীভাবে তাদের ঘায়েল করা যায়। এসব কারণে সৎ সরকারি কর্মকর্তারা নানাভাবে পিছিয়ে পড়েন।
সত্যি বলছি, আমলাতন্ত্রে আমার বিশ্বাস না থাকলেও ভালো ও সৎ আমলাদের প্রতি আমার আস্থা ও বিশ্বাস ছিল। সে কারণেই অসাধারণ কর্মকর্তা মুনীর চৌধুরী, ইউসুফ ভাই কিংবা মাহবুব কবির মিলন স্যারদের মতো যারা চেষ্টা করেন তাদের আমি বেশ শ্রদ্ধা করি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করেন মাহবুব কবির মিলনকে কোন অপরাধে ওএসডি করা হলো। দুর্নীতিমুক্ত দেশের কথা বলা অপরাধ? আর ওএসডি যদি করতেই হয় তাহলে তো দুর্নীতি আর ব্যর্থতার দায়ে যাদের বিচার হওয়ার কথা তারা সব সিনিয়র সচিব হয়ে যাচ্ছেন। আর যারা চেষ্টা করছেন তারা হচ্ছেন ওএসডি।
হ্যা,মাহবুব কবির মিলন মানুষ, ফেরেশতা না। কাজেই তার ভুল থাকবে। কিন্তু নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন বা রেলের টিকিট নিয়ে তিনি যা করেছেন সেগুলো বাদ দিলাম, হার্টের রিংয়ের দাম কমানোর যে লড়াই তিনি করেছেন সেটাই তো বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট। উনি একা যা করেছেন বহু কর্মকর্তা বা বহু দপ্তর ২০-২৫ বছরেও তা করতে পারেননি। আফসোস এই দেশে দুর্নীতি করলে পদোন্নতি হয় আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটা ধারণা দিলে সেই ধারণা আইনসম্মত হয়নি বলে তাকে ওএসডি করা যায়।
নীতি নির্ধারকদের বলবো, মাহবুব কবির মিলন স্যারকে কাজে লাগান। তাকে এমন কোন দপ্তরে দেন যেখানে তিনি কাজ করতে পারবেন। তিনি যে সৎ কর্মকর্তাদের নিয়ে উইং করার কথা বলেছেন সেরকম কিছু হলে মন্দ কী!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই দেশে বঙ্গবন্ধু এক চুল পরিমান দুর্নীতি করেন নাই। আমি বিশ্বাস করি আপনিও চান দুর্নীতিমুক্ত একটা বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ গড়ার লড়াইয়ে সৎ মানুষদের খুব দরকার। প্রয়োজনে বেছে বেছে আপনি কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। আমি তা মাহবুব কবিরের সাথে একমত যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটা যুদ্ধ দরকার এই দেশে। আমি বিশ্বাস করি দুর্নীতিকে হারাতে পারলেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ