এক লাখ ফলোয়ারকে ধন্যবাদ!

Spread the love

19/8/20

ফেসবুকে আমার লেখা অনুসরণ করেন এমন লোকের সংখ্যা একটু আগে (19/8/20) এক লাখ পেরিয়েছে। একইসাথে আজকে আরও একটা লড়াইয়ে আমরা জিতলাম। আপনারা ইতিমধ্যেই জেনেছেন, মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি তরুণ রায়হান কবিরের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি মালয়েশিয়ার পুলিশ। শিগগির তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। দারুণ খবর।

ফেসবুকের বিষয়ে বলি। আজকেই যে এক লাখ ফলোয়ার হবে সেটা জানতাম না। আপনারা জানেন, আমি ফেসবুকে ব্যক্তিগত জীবনের কিছু লিখি না। কোন আনন্দ-বিনোদনের কনটেন্টও নয়। বরং আমি কঠিন সব বিষয়ে লিখি।

এই দেশের রাজনীতি, মানুষ, নানা সংকট, সমাধানের উপায় এসব নিয়েই আমার লেখা। আর যেহেতু আমি একলাইনে স্ট্য্যাটাস না দিয়ে সব বিষয়ের গভীরে গিয়ে বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করি কাজেই খুব ধৈয্য না থাকলে সেগুলো পড়া কঠিন।

একযুগ প্রথম আলোয় সাংবাদিকতা করার পর যখন ছাড়ি তখন ৩০ হাজার মানুষ আমার লেখা পড়তেন। প্রথম আলো ছাড়ার পর গত তিন বছরে আমার লেখা পড়ার জন্য পাঁচ হাজার বন্ধু তালিকার বাইরে আরও এক লাখ মানুষ আমার ফেসবুকে যুক্ত থাকবে এটা আমার জন্য খুব ভালোলাগার বিষয়। আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা পাশে থাকার জন।

আমি সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখি। লিখি বাংলাদেশের পক্ষে। মানবতার পক্ষে। ন্যায়ের পক্ষে। সবসময় সত্যটা খোঁজার চেষ্টা করি। কাজেই নানাজন বিরক্ত হয়। কখনো হুমকি দেয়, কখনো গালি। কখনো মামলার ভয়। কখনো আইডি ফেক। আরও কতো কিছু। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এই আমি আমার মতো লিখে গেছি। নিজের কাছে শতভাগ সৎ থাকার চেয়ে তো বড় কিছু নেই।

তবে আপনারা পাশে না থাকলে কাজটা সহজ হতো না। আর আজ যখন দেখলাম লাখ ছাড়ালো পাঠকের সংখ্যা ভালো লাগলো। আমাকে নিশ্চয়ই আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

এবার একটু রায়হানের বিষয়ে বলি। এই ছেলেটার সাহস, সততা, মানবিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। সে কারণেই লিখেছিলাম রায়হান তোমাকে স্যালুট। আজকে ১৩ দিনের রিমাণ্ড শেষে কী হবে টেনশনে ছিলাম সকাল থেকে।

দুপুরে আইনজীবী সুমিতা শান্তিনি কিষনার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। সুমিতা যখন জানালো, রায়হানের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় কোনো অভিযোগ গঠন করতে পারেনি তখন কী যে স্বস্তি লাগলো। করোনা পরীক্ষা করে উড়োজাহাজের টিকিট প্রাপ্তি সাপেক্ষে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। হয়তো চলতি সপ্তাতেই।’

মানুষের জন্য রায়হানের লড়াই অবাক করার মতো। গ্রেপ্তারের আগে রায়হান আমার সঙ্গে কথা বলেছে এবং জানিয়েছে সে কোন অপরাধ করেনি। কোন মিথ্যা বলেনি। বরং প্রবাসীদের ওপর যে বৈষম্য ও নিপীড়ন চলেছে, শুধু সেই কথাগুলো বলেছি। পুলিশের বারবার জিজ্ঞাসাবাদেও রায়হান অটল ছিল নিজের বক্তব্যে। কী অসাধারণ সাহস!

আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার পর দুপুরে রায়হানের বাবার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। শাহ আলম চাচা আমাকে বলেছেন, ‘আমি বারবার বলেছি আমার ছেলে সারাজীবন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু নিজে অন্যায় করেনি। আমরা অপেক্ষায় আছি কবে রায়হান আমাদের কাছে আসবে। যেদিনই আসবে সেদিনে আমাদের ঈদ।’

কান্না পাচ্ছিল ভীষণ। ৩ জুলাই আল জাজিরার ওই ডুকেমন্টারি প্রকাশের পর পর গত দেড়টা মাস কী প্রচণ্ড পরিমান লড়াই গেছে সেটা কখনো লিখলে ইতিহাস হয়ে যাবে। যদি পারি কখনো লিখবো। ধন্যবাদ সবাইকে যারা পাশে ছিলেন। এই মানুষই আমার আস্থার জায়গা।

আমি বলবো রায়হানের ঘটনায় আমরা সবাই মিলেই জয়ী হয়েছি। জয়ী হয়েছে বাংলাদেশ। রায়হানের বাবাকে কথা দিয়েছিলাম সেপ্টেম্বরের আগেই আপনাদের ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনবো। আশা করছি কথা রাখতে পারবো।

এই যে লিখি, লড়াই করি, অনেকেই নানা সময় আমাকে বলেন, এতো কিছু লেখেন ভয় লাগে না। আমি বলি লাগে। ভয় লাগে। কিন্তু না লিখলে বিবেকের কাছে আরও অপরাধী লাগে। তাই লিখি এই দেশের জন্য, ন্যায়ের জন্য,মানুষের জন্য। এই দেশ আর মানুষের জন্য জীবন দিতেও রাজি। আমি বিশ্বাস করি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই দেশটা এগিয়ে যাবেই। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন। জয় বাংলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.